সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে নাগরিক সংবর্ধনা দিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। সিসিক মেয়র এ সংবর্ধনার আয়োজন করায় তা বর্জন করেছে আওয়ামী লীগ নেতারা।
বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেট নগরীর ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
জানা যায়, সিসিকের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। তবে এই সংবর্ধনায় যোগ দেননি সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। সিসিক মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ বিরোধী বক্তব্য প্রদান করেছেন- এমন অভিযোগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ‘বয়কট’ করেছেন তারা।
জেলা ও মহানগরের নেতারা অনুষ্ঠানে না গেলেও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল ইসলাম নাদেল।
বিষয়টি বুঝতে পেরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি সিসিকের প্রশংসা করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “অনেকে বলছেন মেয়র আরিফ এই নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন। আমি বলি এটা সিটি কর্পোরেশন করেছে। বরং আপনাদের লজ্জা লাগা উচিত এই কারণে যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে এত ভালো কাজ করছেন, অন্য দলের একজন লোক সেটি স্বীকার করছে। সেটা গ্রহণ করছে। আপনাদের তো ভালো লাগার কথা। আমি তো হলাম উছিলা মাত্র। তারা আমাকে নয়, সম্মান দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীকে। যিনি আমাদের প্রতি সদয় হয়ে এতকিছু করছেন। সুতরাং সিলেটের উন্নয়নে সবাই মিলেমিশে কাজ করতে হবে।”
একে আব্দুল মোমেন আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের প্রতি খুবই আন্তরিক। তিনি সিলেটের উন্নয়নে সবকিছু দিতে রাজি আছেন। সিলেটের উন্নয়নে বরাদ্দ দিতে তিনি কখনও দ্বিধা করেন না। না চাইতেই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনেক কিছু পাচ্ছে সিলেট। সিলেট আমার জন্মভূমি। সিলেটের উন্নয়ন মানে আমার উন্নয়ন। সিলেটের উন্নয়নে কোনো বিভেদ সৃষ্টি করবেন না।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “সিলেট নগরীর উন্নয়নে বর্তমান সরকার ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। সরকারি বরাদ্দ অব্যাহত থাকায় সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থা-রাস্তাঘাট উন্নত হচ্ছে। অত্যাধুনিক এয়ারপোর্ট হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। শিক্ষাখাতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সিলেটের প্রত্যেকটি কলেজে বিশেষ অনুদান দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে মডেল সিলেট গড়ে তোলা হচ্ছে।
টাকা শুধু পেলেই হয় না, টাকা কাজে লাগাতে হয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “টাকা আগেও দিয়েছিলেন আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী। কিন্তু ফেরত গেছে। বর্তমান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা টাকা কাজে লাগাচ্ছেন। যার ফলে সিলেটের উন্নয়ন হচ্ছে।”
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশংসা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এই সিলেট নগরী আপনার-আমার সবার। কে কোন মতের-দলের সেটা দেখার বিষয় নয়। আমরা সবাই সিলেটের- এটাই মূল বিষয়। আমার কাছে কেউ কেউ বলেন যে মেয়র অন্য দলের। সুতরাং আপনি উনার অনেক প্রস্তাব গ্রহণ করবেন না। আমি বলি- সিলেট তো আমারও, মেয়র সাহেবরও (আরিফের)। সুতরাং বৃহত্তর সিলেটের মঙ্গলের জন্য সব করতে হবে।”
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। অনুষ্ঠানে সিসিকের সকল কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, “সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে আনায় ও সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ঢাকা-সিলেট ৬ লেন মহাসড়ক এবং নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বিশেষ অবদানের জন্য, সিলেটের কৃতি সন্তান, সিলেট-১ আসনের এমপি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনকে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান করা হবে।”
অনুষ্ঠানে দল-মত নির্বিশেষে বিভিন্নজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
আমন্ত্রণ পাওয়ার পর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বৈঠক করে অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, এটি সিসিক মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর অনুষ্ঠান। তিনি আওয়ামী লীগকে নিয়ে কটুক্তিও করেছেন। তাই ‘তার আয়োজিত’ অনুষ্ঠানে যাবে না আওয়ামী লীগ।
এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, “আরিফের অনুষ্ঠানে আমরা যাব না। এটা তো বিএনপির অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠান আমরা বর্জন করছি। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সিলেট সফরকালে অন্যান্য অনুষ্ঠানে আমরা থাকছি।”